আন্দোলনকারীরা ‘ভাড়াটিয়া’ মন্তব্য করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেছেন, ‘ভাড়া করা লোকের আন্দোলনে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।’ তার বিরুদ্ধে আনা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও শিল্পীদের সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ত্রাণের কথা বলে কাওরান বাজার থেকে লোক ভাড়া করে এনে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালানো হচ্ছে। আর যারা শিল্পী পরিচয় দিয়ে নানান অভিযোগ করছেন তারাও শিল্পী না।’ জায়েদের অভিযোগ তার ভালো কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু লোক তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ ছাড়াই প্রপাগান্ডা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এই নেতা। যদিও ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অনা অসংখ্য অভিযোগের ভিত্তিতে চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠন তাকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি বয়কটের নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, শিল্পীদের সদস্য পদ বাতিল, মামলা, হয়রানি, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, আর্থিক দুর্নীতি। এ ছাড়াও শিল্পীদের অভিযোগ জায়েদ খান এক নায়িকাকে নিয়ে সমিতি অফিসে আপত্তিকর অবস্থায় সময় কাটানোর মুহূর্ত দেখে ফেলায় সদস্য পদ বাতিল, মামলার হুমকি এবং কারো কারো সদস্যপদ ফিরিয়ে দিতে একান্তে দেখা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন জায়েদ খান।
এ নিয়ে ইতোমধ্যে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন শিল্পীরা। এফডিসির সামনে সমাবেশ মানববন্ধন করেছেন তারা। সেই মানববন্ধনে একাধিক শিল্পী জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করেন। তাদেরই একজন নায়িকা সাদিয়া মির্জা। তার অভিযোগ তিনি দীর্ঘদিন ধরে শিল্পী সমিতির সদস্য থাকার পর জায়েদ খান দায়িত্বে আসার পর তার সদস্যপদ বাতিল করে দেন। এরপর তিনি যোগাযোগ করলে জায়েদ খান তাকে দেখা করা নামে অন্য ইঙ্গিত দেন। খারাপ ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তিনি জায়েদ খানের সাথে দেখা না করে সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগরের সাথে দেখা করেন। সভাপতি তাকে আবার ফি জমা দিতে বললে তিনি তা জমা দিয়ে শিল্পী সমিতি অফিসে যান। সেখানে সভাপতি মিশা তার সদস্যপদ বহালের কথা বললে জায়েদ তা শুনেননি। একই অভিযোগ করেছেন আরেক শিল্পী শিমু।
আরেক শিল্পী, যিনি চলচ্চিত্রে ভিলেন চরিত্রে কাজ করেন। তার অভিযোগ ঘটনার সময় তিনি বাবুল রেজার ‘মন বুঝে না’ ছবিতে কাজ করছিলেন। এ সময় একদিন তিনি এফডিসিতে শিল্পী সমিতির যে গেটে সিসি ক্যামেরা নেই সেই গেট দিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় একটি আওয়াজ পান। অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে একজন নায়িকাসহ জায়েদ খানকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পান। তখন তিনি এর প্রতিবাদ করেন। এর পর থেকে জায়েদ খান তার সদস্যপদ বাতিল, তাকে করোনা রোগী সাজিয়ে পরিবারে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি ও মামলাসহ নানানভাবে হয়রানির চেষ্টা করছেন।
অপর দিকে চিত্র নায়িকা পপির অভিযোগ পেশী শক্তি ব্যবহার করে চেয়ার দখল, ভোটে কারচুপি, শিল্পীদের সম্মানহানি, শিল্পীদের সাথে আরেক শিল্পীর দূরত্ব সৃষ্টি করাসহ একের পর এক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ এসবের মূলে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। গণমাধ্যমকে পপি বলেন, জায়েদ খানের বিরুদ্ধে যে সব শিল্পী রাস্তায় নেমেছেন তারা কিন্তু শিল্পী, তারা তাদের অধিকারের জন্য নেমেছেন। এই ১৮৪ জন শিল্পীর ভোটাধিকার নিজের সদস্যপদ ফিরে পেতেই কিন্তু নেমেছেন।
জায়েদ খানের দুর্নীতির বর্ণনা দিতে গিয়ে পপি বলেন, আমরা অসহায় শিল্পীদের সহযোগিতা করার জন্য অনেক শো করেছি। যেখানে শো করতে গিয়েছি সেখানে নিজেরাই গেছি। জায়েদ খান আমাদের সেখানেই নিয়ে যেত যেখানে ফান্ড কালেকশন হতো, আর যেখানে ভোট কিনতে যেতেন সেখানে নিয়ে যেতেন না। এভাবেই অনেক টাকা কালেকশন হয়েছে। সে টাকাগুলোর সঠিক হিসাব কিন্তু আমরা পাইনি।
শিল্পীদের সব অভিযোগ অস্বীকার করে জায়েদ খান বলেন, সমিতির সব কর্মকাণ্ড নিয়ম মেনেই তিনি করছেন। যারা এসব অভিযোগ আনছেন সেগুলো শুধু তাকে হেয় করার জন্য। তার দাবি সদস্যপদসহ যত অভিযোগ আসছে তার কোনো প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, আমি চাইলেই কাউকে সদস্যপদ দিতে পারি না আবার বাতিলও করতে পারি না। এর জন্য গঠনতন্ত্র আছে। নির্বাচিত কমিটি আছে। যা হয় তা সবার সম্মতিতেই হয়।
পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ভাড়া করা লোক এনে আন্দোলন করে পদত্যাগ করানো যায় না। এর জন্য গঠনতন্ত্র আছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচিত কমিটি ও সদস্যরা উদ্যোগ নিলে পদত্যাগ হতে পারে। তা না করে রাস্তায় আন্দোলন আর প্রপাগান্ডা করে পদত্যাগ হয় না। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের যদি প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে সমিতির সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী যে শাস্তি হবে তা-ই আমি মাথা পেতে নেব। নয়তো আইনানুগ ব্যবস্থার কথা জানান তিনি।